
ডানপন্থী রাজনীতিতে বেড়েছে দৃশ্যমানতা
- আপলোড সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৪:০১:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৪:০১:৪৭ অপরাহ্ন


দেশের রাজনীতিতে ডানপন্থী বা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয়তা ও দৃশ্যমানতা বাড়ছে। বিশেষ করে গত বছরের আগস্টে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের পর এই পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেকে এটিকে ‘উত্থান’ হিসেবে দেখলেও বিশ্লেষকদের মতে, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। বরং দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর এসব দল তাদের পুরনো রাজনৈতিক অবস্থানে ফিরে আসছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা ছিল ইসলামপন্থী দলগুলো। সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা মিডিয়া কাভারেজ কোনোটাতেই তাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। সেই শূন্যতায় ইসলামপন্থী দলগুলো মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক সময়ে এসব দল বিভিন্ন দাবিতে বড় বড় সমাবেশ করছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ ছিল একটি বড় উদাহরণ। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে দলটির প্রথম প্রকাশ্য রাজনৈতিক সমাবেশ। সমাবেশে দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আগামী দিনে সংসদে কেবল ইসলাম থাকবে। কোরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোনো মতবাদ চলবে না। বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতি নতুন নয়। বরং বর্তমানে বামপন্থীদের অনুপস্থিতি এবং সেক্যুলার দলগুলোর দুর্বলতায় তারা বেশি চোখে পড়ছে। তিনি বলেন, এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং রাজনৈতিক ভারসাম্যের স্বাভাবিক পরিণতি।
এর আগে, একই জায়গায় মহাসমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, পিআর পদ্ধতির দাবি, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’-এর বিচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামও নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিশাল সমাবেশ করেছে। এই রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গেও ইসলামপন্থীদের নাম জড়িয়েছে। রোজার সময় দোকান বন্ধে চাপ, মাজার ভাঙা, থিয়েটার বন্ধ, বাউলদের বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর, নারীদের ফুটবল ম্যাচ বাতিল এবং পোশাক নিয়ে হেনস্তার মতো ঘটনায় ডানপন্থীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। শুধু মাঠের রাজনীতি নয়, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তেও তাদের প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে। ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটির দুই সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, পাঠ্যবইয়ে ধর্মবিরোধী বিষয়বস্তু রয়েছে। এ ঘটনাকে অনেকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে ডানপন্থীদের প্রভাবের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, ইসলামপন্থীদের এমন সক্রিয়তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য হুমকি হতে পারে। তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলো এই অভিযোগ মানতে নারাজ। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি কোনো উত্থান নয়। বরং তারা দীর্ঘদিন পর নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাচ্ছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এই দেশে আমরা বহু বছর ধরে রাজনীতি করছি। নতুন করে কারো উত্থান হয়নি। বরং আমাদের ওপর দীর্ঘদিন দমন-পীড়ন ছিল। এখন সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আমরা স্বাভাবিক রাজনীতি করছি। যদিও বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন বামপন্থী রাজনীতিক সাইফুল হক। তিনি মনে করেন, ডানপন্থীদলগুলো এখন শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং রাষ্ট্রের ভেতরের বিভিন্ন স্তরেও প্রভাব বিস্তার করছে। প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার কিছু অংশে এদের অনানুষ্ঠানিক বলয় তৈরি হয়েছে বলে তার দাবি। এই দেশে আমরা বহু বছর ধরে রাজনীতি করছি। নতুন করে কারো উত্থান হয়নি। বরং আমাদের ওপর দীর্ঘদিন দমন-পীড়ন ছিল। এখন সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আমরা স্বাভাবিক রাজনীতি করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, যারা এতদিন ক্ষমতার আশপাশে থেকেছে, তারা এখন নিজেই বড় শক্তি হয়ে উঠেছে। এটা বিস্ময়ের।
এদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নজরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) গত ২১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার চললেও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েছে। একইসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসও এক প্রতিবেদনে লিখেছে, গণঅভ্যুত্থানের পর ‘কট্টরপন্থীরা’ নতুন করে সুযোগ নিচ্ছে। তবে ইসলামপন্থী রাজনীতি বিশ্লেষক শরীফ মুহাম্মদ বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত মনে করেন। তার মতে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতি নতুন নয়। বরং বর্তমানে বামপন্থীদের অনুপস্থিতি এবং সেক্যুলার দলগুলোর দুর্বলতায় তার বেশি চোখে পড়ছে। তিনি বলেন, এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং রাজনৈতিক ভারসাম্যের স্বাভাবিক পরিণতি। রাজনীতির মাঠে এই পরিবর্তন স্থায়ী হবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। অনেকেই বলছেন, এটি নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের ফল এবং নতুন সরকার কাঠামোর ওপর। তবে এটি এখন পরিষ্কার ডানপন্থী দলগুলো রাজনীতির মাঠে ফিরে এসেছে এবং তাদের প্রভাব আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ